পদ্মার ইলিশ

সূচিপত্র 

১. পাভেল কুবলয়

২. রিফাত বিন সালাম

৩. সারাজাত সৌম্য

৪. পরিতোষ হালদার

৫.ফারজানা মণি

৬. মেহরাব ইফতি

৭. ইভা অরণ্যা

৮. মোঃ কামরুজ্জামান টুটুল

৯. নিষাদ

১০. অনুভব আহমেদ

******************************************************



১. পাভেল কুবলয়



কিতাবখানা


তুমিই সেই বেতৈন ফলেভরা কিতাবখানা, প্রিয় গ্যালাতিয়া। পৃষ্ঠা পৃষ্ঠা খুলে নেই সাদা ইডেনের জল।
মেখে নিই জিসম সমগ্রে আতররঙ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রতিটি অক্ষরে গুঁজে রাখি প্রেমের মুরাকবা । সাজিয়ে রাখি বেহেস্তি ফলের নির্যাস আর তোমার প্রতিটি শিরায় রুয়ে দিই পবিত্র সিডার গাছেরবন । নিঃসঙ্গ আরবসাগরের ঢেউয়ে ভাসা খরগোশ, তোমার স্তবকে শুকিয়ে নিতে নিজের শরীর , সাঁতরে ফেরে বাতাসের তারকাঁটা ।
নামিয়ে ফেলে আকাশের প্রাচুর্য, কিতাবের অক্ষরে অক্ষরে।


(জানুয়ারি ২০১৭)

সুগন্ধবহ পাখি
একটি পাথরে প্রতিষ্ঠাপিত প্যাগম্যালিয়ন, রক্তাম্বর কমলার রগে প্রবাহিত তাসবিহ-গুনা রস হয়ে, জপে যায় দিনরাত্রি তার অঙ্গের গৌরব। একঝাঁক সুগন্ধবহ পাখি উড়ে যায় গির্জার সোনালী দেয়ালে ,বালির শরীরে জলের আত্মাহুতির মত।জিকিরে ক্লান্ত পাখিরা সব ছড়িয়েছিটিয়ে যাওয়া গ্যালাতিয়া, যার ভেতর আমি প্রতিষ্ঠাপিত, শরীরের ভেতর আত্মার মত।

(জানুয়ারি ২০১৭)



দুধগাছ


নিষিদ্ধ বোতাম খুলে বসে আছে নকশাদার দুধগাছ
গাছের পাতারা সূর্য পুড়িয়ে আলোর দোকান সাজিয়েছে, ভাঁজকরা শূন্যের উপর


দোকানে পানেরঢালা এগিয়ে বসে দোকানদার
সুগন্ধি যরদার ঘ্রাণে জমায়েত করে সামুদ্রিক মাছেরা
এগারো পদের যরদা আর ছয় পদের সুপারি মিশানো পান খেয়ে মাছেরা অমরত্ব নিয়ে উড়ে চলে যায়



পৃথিবীতে একটিই দুধগাছ। নিষিদ্ধ বোতাম খুলে বসে আছে তোমার শরীরে।


(মে ২০১৭)


আত্মহত্যা
আত্মহত্যার বহুবছর পরে কবরে খবর
এলো, আমার পচালাশের বীজে আর পুষ্টিগুণে জন্মেছে যেসব পামগাছ, তাল গাছের উচ্চতা-
তারাও রঙিলা পাখি-স্বর বাতাসে সাজিয়ে রাখে। 
'পাখি-স্বর' মাপে, উড়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মেঘেদের কালি; 
বৃষ্টিতে ফুলেরগন্ধ ঝরে, ঝরে তারামাছ। মাজারে পতিত কবরের মাটি খেয়ে
বন্ধ্যানারী পাচ্ছে বেহেস্তি সন্তান আর ফলগাছ। 

জানলাম, তুমি জন্মেছ, গুপ্তধনের মানচিত্র 
মুখে এঁকে দিয়েছিলো মহামিস্ত্রি, লোভীরাজ্য খুঁজে
হয়রান। আর তুমি 'পাখি-স্বর' যোনিপথে মেখে
ঘুমাও, সুবেহ সাদেকের শব্দে জন্মে আমার সন্তান। 
আত্মহত্যার বহুবছর পরে জেনেছি, মূলত
মৃত্যু না; আত্মজন্মের মন্ত্র বিক্রি করতাম আমি।

(সেপ্টেম্বর ২০১৭)






২. রিফাত বিন সালাম রূপম

সুন্দরবন রক্ষার দায় শুধু বাংলাদেশের একার না



প্রথমেই বলা দরকার "সুন্দরবন বাঁচাও" আন্দোলন শুধু বাংলাদেশ বা ভারতের বা পাকিস্তানের একার প্রশ্ন না। তাই আমরা যখন চিৎকার করে বলি -"Go back India. GO back NTPC" তখন সেই চিৎকারে ভারতের সচেতন নাগরিকদেরও সমর্থন চাই। কারণ সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের একার প্রশ্ন না, বরং ভারতের অংশে থাকা সুন্দরবনেরও প্রশ্ন। সুন্দরবন যে ইকো সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে টিকে আছে তা নষ্ট হয়ে যাবে যদি বনের কোনো অংশের ক্ষতি হয়। অতএব এ সংগ্রাম ভারত বাংলাদেশ তথা দুনিয়ার পরিবেশ বাঁচানোর সংগ্রাম। আর রাষ্ট্র, কাঁটাতার, বর্ডার এসব মানুষকে ভাগ করে শুধু। মানুষ বর্ডারের উর্ধে। আর এ লেখায় ভারতের জনগণের প্রতি কোনো অসম্মান দেখানোর চেষ্টা করা হয়নি। শুধু ভারত-বাংলাদেশের নির্মম পররাষ্ট্রনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের উপর চলা ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ করতে ভারতের বন্ধুদেরও সাথে চাই। সুন্দরবন আন্দোলন তাই মানুষের আন্দোলন হয়ে উঠবে এমনটাই আশা করি।   


শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সুন্দরবন হলো বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। হাজার প্রাণবৈচিত্র্য আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বন, যার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের পরিবেশের ভারসাম্য। একই সাথে সেখানকার স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা। কিন্তু ২০১১ সালে ভারত ও আওয়ামী লীগ সরকারের যৌথ উদ্যোগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ঘোষণার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবন।

শুরু করা যাক বিভিন্ন সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত তথ্যদিয়ে, বনাঞ্চল বা কৃষি জমি আছে এমন এলাকায় কয়লাভিত্তিক প্রকল্প চালু হলে পরিবেশের ব্যাপক দূষণ হবে- এমন যুক্তিতে এনটিপিসিকে ভারতেই কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প করতে দেয়নি ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তাহলে কীভাবে ভারতের কোম্পানি ‘এনটিপিসি’ খোদ ভারত থেকেই বিতারিত হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো ধ্বংসযজ্ঞ করার অনুমতি পায়?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে একটু পেছনের দিকে যাওয়া দরকার। একেবারে বাংলাদেশের জন্মলগ্নে অর্থাৎ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের চিত্র দেখা দরকার।

১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে কমরেড সিরাজ সিকদারের ‘ছয় পাহাড়ের দালাল’ তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছিল। সেটা দিয়েই সুন্দরবনের আলোচনা শুরু করা যাক। স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বিক বিকাশের পথে সবচেয়ে বড় ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন তিনি। ওই ছয়টি সমস্যা বিষয়ক তত্ত্বকেই 'ছয় পাহাড়ের দালাল' তত্ত্ব বলা হতো। ওই তত্ত্বে দেয়া সমাধান কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু তত্ত্বে আলোচ্য বিষয়গুলো স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও একইভাবে প্রযোজ্য। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় ছিল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ক।

তিনি সেখানে বলেছেন, "তারা (অর্থাৎ তৎকালীন আওয়ামী সরকার এবং এর সাথে থাকা দালাল সম্প্রদায়) ক্ষমতা ও গদির লোভে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের নিকট পূর্ববাংলার জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়, পূর্ববাংলাকে ভারতের নিকট পরাধীন করার দাসখত লিখে দেয়, পূর্ববাংলায় তাদের ডেকে আনে। এভাবে তারা পূর্ববাংলাকে ভারতের উপনিবেশে পরিণত করে। এর ফলে পূর্ববাংলার অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, প্রতিরক্ষা, আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি অর্থাৎ পূর্ববাংলার সকল ক্ষেত্রে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা নিয়ন্ত্রণ ও লুণ্ঠন কায়েম করেছে। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের পূর্ববাংলায় উপনিবেশ স্থাপনের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ, মনিসিং-মোজাফফর মস্কোপন্থী, অন্যান্যদের পূর্ববাংলার জনগণের জন্য সংবিধান প্রণয়নের কোনো অধিকার নেই। তারা দেশদ্রোহিতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও মীরজাফরীর অপরাধে অপরাধী।" (সুত্র: ছয় পাহাড়ের দালাল আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টদের দেয়া সংবিধান প্রসঙ্গে-১৯৭২)



বাংলাদেশে ঠিক কবে থেকে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তার শুরু হয়েছে তার একটা সাধারণ ধারণা পাওয়া যায় এই লেখা থেকেই। ৭২ সাল অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই সামগ্রিকভাবে বাংলদেশ সরকার ভারতের কাছে মাথা নত করেছে। ৭২ থেকেই ধারাবাহিকভাবে ফারাক্কা বাঁধ, নদীহত্যা, সীমান্তহত্যা, ভারতীয় মিডিয়ার অবাধ প্রবেশ, ট্রানজিট, বাণিজ্য ঘাটতিসহ হাজার হাজার বিষয় এসেছে।

কিন্তু বাংলাদেশের সরকারগুলো বন্ধুত্বের নামে ভারতের বিরুদ্ধে কখনওই মুখ খুলে কথা বলেনি। এমনকি বিএনপি সরকারও, যারা মুখে মুখে ভারতবিরোধিতা করলেও তাদের শাসন আমলেও সীমান্তহত্যা হয়েছে, নদীহত্যা হয়েছে। সরকারগুলোর এমন ভণ্ডামির অন্যতম কারণ আমাদের দেশের সরকারগুলো নিজেদের গদি রক্ষার জন্য মরিয়া। তারা ভারতের অর্থ থেকে শুরু করে ভারতের গোয়েন্দাদের সাহায্য নেয় এমন অভিযোগও আছে। তাই বাংলাদেশের অতীত পররাষ্ট্রনীতি এমনই নির্লজ্জ ছিল।

এবার আসা যাক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামে। সম্প্রতি বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকার সংবাদ ছিল কিছুটা এমন- “ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি ও বাংলাদেশের পিডিবির যৌথ বিনিয়োগে বাগেরহাটের রামপালে বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে আওয়ামী সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প চালু হলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে সুন্দরবন এবং আশেপাশের বন প্রকৃতি। কিন্তু সরকার বলছে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।”

২০১০ সালে ভারতীয় কোম্পানি 'ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশন' বা এনটিপিসি আলোচনায় আসে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের ইস্যুতে। ভারতের মধ্যপ্রদেশে এনটিপিসি’র কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিল করে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে, ভারতে কয়লাভিত্তিক প্রকল্প করতে গিয়ে ভারত থেকে দুই-দুইবার বিতাড়িত হয়েছে ভারতীয় এ সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। বনাঞ্চল বা কৃষি জমি আছে এমন এলাকায় কয়লাভিত্তিক প্রকল্প চালু হলে পরিবেশের ব্যাপক দূষণ হবে, পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হবে, এমন যুক্তিতে এনটিপিসিকে ভারতেই ওই প্রকল্প করতে দেয়নি ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

যদিও সরকার বরাবরই বলছে, সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু স্বয়ং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন, “দেয়ার উড বি সাম ইমপ্যাক্ট, অবভিয়াসলি (অবশ্যই কিছু প্রভাব পড়বে)। এত নৌকা আসবে, ক্যারিং সো মাচ কোল; এই নৌকা আসার ফলেই তো ফ্লোরা-ফনা ভেরি সাবস্টেনশিয়ালি অ্যাফেক্টেড হবে।”

সোজা কথা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন, সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কারণে 'অবশ্যই কিছু প্রভাব পড়বে'। প্রচুর কয়লা ভর্তি নৌকা আসা-যাওয়ার ফলে সুন্দরবনের 'উদ্ভিদ ও প্রাণী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে'।

একই রকম কথা বলছেন পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বায়ুদূষণ, ছাইদূষণ, সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হলে জলজ প্রাণীদের আবাস সঙ্কট, সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির নামে সরকারের প্রতারণা, এমনকি স্থানীয় মানুষদের কর্মসংস্থানের মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হচ্ছে।

একই সাথে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও আপত্তি ও উদ্বেগ জানিয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ কল্লোল মোস্তফার এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিপদ নিশ্চিত জেনেই রামসার ও ইউনেস্কোর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে।

সুন্দরবনের পাশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউনেস্কো সরকারকে প্রথম চিঠি দেয় ২২ মে ২০১৩ তারিখে। ১৫ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে সরকারের ইআইএ রিপোর্ট ইউনেস্কোর হাতে পৌঁছে। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে ইউনেস্কো ইআইএ রিপোর্টের ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা উল্লেখ করে সরকারকে চিঠি পাঠায়। সরকারের মতামত ইউনেস্কোর কাছে পৌঁছায় ১৫ এপ্রিল ২০১৪।

এর মধ্যে ইউনেস্কো সুন্দরবনের পাশে একই স্থানে আরেকটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের (ওরিয়ন গ্রুপের ৫৬৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র) পরিকল্পনার কথা জানতে পারে। ইউনেস্কো এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ১১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে সরকারকে আবার চিঠি দেয়। ইউনেস্কোর ৩৮ ও ৩৯তম অধিবেশনে সুন্দরবনের পাশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচল এবং অন্যান্য দূষণকারী কারখানার ব্যাপারে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

তবুও নানা রাজনৈতিক লাভ ক্ষতির হিসাব শুরু হয় দুই দেশের ক্ষমতালোভী শ্রেণির মধ্যে এবং শেষ পর্যন্ত সেই বন ধ্বংসকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এই প্রকল্প সুন্দরবনের জন্য কতটা ভয়াবহ হবে সেটা খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নিজেই বলেছেন। তার মতে, “জ্বালানী মন্ত্রণালয় অস্বীকার করলেও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প সুন্দরবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবেই।”

তাহলে সুন্দরবন এবং এর আশেপাশের পরিবেশ, পানি, মাটির ক্ষতি হবে জেনেও কেন এই প্রকল্প স্থাপনের কাজ চালু রেখেছে সরকার?

বর্তমানের আওয়ামী সরকার এক অর্থে ক্ষমতায় অবৈধভাবে টিকে আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই বিব্রত। তাই দেশীয় পুলিশ বাহিনীর ওপর তারা অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। ঠিক একইভাবে আন্তর্জাতিকভাবেও তারা ভারত এবং ভারত বলয়ের উপর চরম ভাবে দায়বদ্ধ।

স্বাভাবিকভাবেই ভারত এখন এই অঞ্চলের মোড়লের ভূমিকায় আছে। তাই ভারতের মন এবং ধন রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশের এই সরকার। মোড়লের ধন বাঁচাতে এই সরকার যেমন ট্রানজিটের মতো বিষয় নিয়ে তড়িঘড়ি করেছে, একইভাবে অপূরণীয় ক্ষতি জেনেও ভারতের মন রক্ষার জন্য এই প্রকল্প চালু রেখেছে। এই সরকার ৭২-এর মতোই কাজ করবে সেটা সহজেই আশা করা যায়।

কিন্তু আরেকটি প্রশ্ন বাকি থাকে, ভারতের এমন সম্প্রসারণবাদী আচরণ দেখেও বাংলাদেশের জনগণ কেন এর প্রতিবাদ করছে না?

কারণ অনেকটা পরিষ্কার, শাসকশ্রেণী দিনে দিনে আরও ভয়ংকর দানবে পরিণত হয়েছে। তাদের শাসনের ধরনও বদলেছে, আরও জটিল হয়েছে সমীকরণ। তাই এখন শাসকশ্রেণী শুধু গদিতেই বসে রাজত্ব করে না বরং তারা এখন ‘মীরজাফর বুদ্ধিজীবী’ লালন-পালন করে। যাদের কাজ হলো জাতির ভেতরে ‘স্লো-পয়জন’ পুশ করা। ধীরে ধীরে জাতিকে প্রতিবাদহীন করে গড়ে তোলা। কখনও বিজ্ঞানীবেশে, কখনও লেখকবেশে আবার কখনও সাংবাদিকবেশে এই কাজটি করেন তারা।

এই ‘মীরজাফর বুদ্ধিজীবী’রা প্রধানত দেশের প্রধান সমস্যা থেকে মানুষকে অনেক দূরে রাখার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। মুখে স্বাধীনতার ফেনা তুলে দেশ বিক্রির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। তারা সরকারের লুটপাট এবং দুর্নীতির কথা না বলে, জনগণকে শুধু মুক্তি সংগ্রামের গল্প শুনিয়ে স্বাধীনতার ভুল ধারনা দিয়ে যাচ্ছেন।

ইতিহাস বলে বুদ্ধিজীবীরা নিরপেক্ষ না। তারা একটা পক্ষের হয়ে কথা বলবেন বা কাজ করবেন এটা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। কিন্তু তার মানে এই না যে, তারা সকল ক্ষেত্রেই সুবিধাবাদের হয়ে কথা বলবেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানের শোষণ দেখেও পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে তারা যেমন রাজাকার, ঠিক একইভাবে এখন যারা সুন্দরবনের ধ্বংস দেখেও মুখ বন্ধ রেখেছে তারাও রাজাকারের চেয়ে কম অপরাধী না।

দীর্ঘ একটা বুদ্ধিভিত্তিক প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, সরকারের অনেক নীতি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছে না। সকলের মধ্যে গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা সক্রিয় আছে।

তবে শেষ কথা এসব সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী এবং তাদের চিন্তা বলয়ের বাইরেও ভিন্ন আওয়াজ উঠছে। তারাও হয়ত কোনো পক্ষের বা কোনো দলের মানুষ। তারা যেমন বাংলাদেশে আছেন তেমন ভারতেও আছেন। প্রতিবাদ করছেন। তবুও তারা কোনো দলের পক্ষে কথা না বলে সামগ্রিকভাবে মানুষ আর পরিবেশের পক্ষেই কথা বলছেন। আজ যারা সুন্দরবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, হয়ত তাদের হাত ধরেই আবারও প্রতিবাদী মানুষ গড়ে উঠার প্রক্রিয়া শুরু হবে। "পরিবর্তন" আসবে, এমন আশার উপর ভরসা করেই এখনো অসংখ্য অসহায় মানুষ বেঁচে আছেন, এখনো অসংখ্য মানুষ তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন।  


(মে ২০১৭)



৩. সারাজাত সৌম

ট্যারা



এই জীব কী নারীময়তুলতুল হলেও
তো জল না। পাখি হলেও তো, সে তা
না। এটা আমার চোখশুয়ে থাকলে
দেখি তুমি খাড়া।
উলঙ্গ তুমিতাও তো না, পাশে
পোশাকে মতো একটি ঘোড়া।
একিতোমার জ্বর? আমার চোখে
তুমি তিমি এবং তিনিই কী মায়া!
আমার দুইটাই ট্যারা চোখতোমাকে
দেখি দুই পরিখায়আস্ত স্তনের
জোড়া।

(সেপ্টেম্বর ২০১৭)




৪. পরিতোষ হালদার

ইতিচিহ্ন

কিছু উষ্ণ ছিল। পাতায় পাতায় ইতিচিহ্নের স্রোত।
এই ইঙ্গিতখসা দিন, হাওয়ায় উড়ে গেছে- কর্পুর গন্ধের মতো
তোমার হিজল।
একবার ঘুরে দাঁড়াও নাচুক মল্লার।
মাংসের মায়া থেকে উঁকি দিয়ে দেখ, ওইতো মোহ- ঝিল্লি
জড়ানো রূপ।
তুমি এক উপমিত খাদ- তোমার কিনারে লীলায়িত বর্ষাকাল।
আঙুলে পাখি আঁকা সন্ধ্যাবেলা, কতোটা অন্ধকার লেখ
রাতের কাগজে।
ঘুম ভেঙ্গে গেলে আবার সকাল, অর্ধেক ফলের পাশে অধিক চুম্বন।


(সেপ্টেম্বর ২০১৭)



৫. ফারজানা মণি

শরীরী


একটা হিম যুগের পদ্মাসন হবে - 
নারী প্রেম - তবে পুরুষ কি?
কে যে বলেছিলো বিশ্ব ইতিহাসে রচিত দেহপ্রেম - প্রণয় প্রেম কই?
শরীর যদি সব হয় তবে - হাঁসের ও তো শরীর আছে____

(মে ২০১৭)

রাতশিল্প



উলের বুননে ভেসে আসে মাধবীলতার বাগান
কড়া গন্ধে মৌমাছি ঘুরে বেড়ায়
নীলতাপের রাস্তায়.... 

ডুবুরি সাঁতার কাটে -
বুকপকেটের সূতা
ফিরে আসে সমুদ্রে...

পাখিদের চোখে আমরা এখনো 
ফুরিয়ে যাওয়া রাত দেখি।

(সেপ্টেম্বর ২০১৭)




৬. মেহরাব ইফতি 

 সিমিক পাঠের ভূমিকা

                                   
“আমার বিবেচনায়, আটপৌরে জীবনের আনন্দ থেকে বিচ্যুত ‘সত্য’ মূল্যহীন। প্রত্যেকটি মহা থিওরি ও সেন্টিমেন্টকে প্রথমে রান্নাঘরে এবং পরে বিছানায় পরীক্ষা করে দেখতে হবে।”
চার্লস সিমিক

এইসব কথা হুড়মুড় করে কেবল চার্লস সিমিকের মুখ থেকেই শুনতে পাওয়া যায়; যিনি অবলীলায় বলতে পারেন, ‘বাবার জ্ঞাতিরা ছিলেন আরও এককাঠি সরেস। তাঁরা আকণ্ঠ মদ পান করতেন, হই-হুল্লোড়ের মাস্টার ছিলেন একেক জন। আমার সাযুজ্য তাঁদের সঙ্গেই বেশি।’
‘ওয়ার্ল্ড ডাজন্ট এন্ড’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৯০ সালে পান পুলিৎজার পুরস্কার। নির্বাচিত কবিতা : ১৯৬৩-২০০৩ কাব্যগ্রন্থের জন্য ২০০৫ সালে লাভ করেন আন্তর্জাতিক গ্রিফিন পোয়েট্রি পুরস্কার। তাঁর দ্য বুক অব গডস অ্যান্ড ডেভিলস (২০০০) নিউইয়র্ক টাইমসের বছরের (২০০০) উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রায় ৩৪ বছর যাবত তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল সাহিত্য ও ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে বিখ্যাত ফরাসি ম্যাগাজিন ‘প্যারিস রিভিউ’য়ের কবিতা বিষয়ক কো-এডিটর।

জন্ম ১৯৩৮ সালের ৯ মে, যুগোশ্লাভিয়ার বেলগ্রেডে। ১৯৫৪ সালে যখন দেশ ছাড়েন সারাজীবনের জন্য নাম লেখান উদ্বাস্তুশ্রেণিতে। বাস্তুচ্যুতি, নির্বাসন তাঁর জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। সমালোচকগণ মন্তব্য করেন, ‘সিমিকের কবিতার সুর কেমন বিদেশি।’ জবাবে সিমিক বলেন, ‘টের পাই, আমার কেইসটা জটিল, আমার শ্রেণিকরণে বেশ সমস্যা, আমি না-নির্বাসিত, না-অভিবাসী, কিন্তু এ ব্যাপারে আমার সত্যি কোনো মাথাব্যথা নেই।’ বস্তুত, একাধিক ভাষার উপর দখলদারি, ইউরোপের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, সাম্প্রতিক ইতিহাসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কারণে সিমিকের কণ্ঠস্বরে ইউরোপ ও অ্যামেরিকার একধরনের মিশেল তৈরি হয়েছে।
উদ্বাস্তু হয়ে তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আসেননি; প্রথমে ফ্রান্সে উদ্বাস্তু ছিলেন। সেখানেই সিমিকের প্রথমবারের মতো কবিতার প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পায়। ইংরেজি শেখার জন্য মায়ের কিনে আনা ‘লাইফ’, ‘লুক’ ম্যাগাজিনের পাতা উল্টে স্নানের পোশাক পরা নারী মডেল দেখা, আর স্কুলে বোদলেয়ার-ভার্লেনের কবিতাপাঠ ছাড়াও তাঁর কবিতার প্রতি আকর্ষণের আরও কিছু অকাব্যিক কারণের মধ্যে একটি ছিল মার্কিন চলচ্চিত্র দেখা। দশ কী বারো বছর বয়সেই সেসব সিনেমা দেখে বেলগ্রেডের ভয়াল রাত্রিগুলো তাঁকে ‘পোয়েটিক’ এক আচ্ছন্নতায় জানালার পর্দা তোলার সাহস জোগাত। তাঁর কবিতায় অকাব্যিক বিষয়ের প্রভাব তাই লক্ষণীয়, যেমন জ্যাজ ও ব্লুজের গীতিময় প্রভাব।
প্রথম-জীবনে চিত্রশিল্পী হওয়ার গোপন বাসনা তিনি মনে মনে লালন করতেন। পোস্ট-ইম্প্রেসনিস্ট শিল্পীদের অনুকরণ করে যাত্রা শুরু করলেও পরে জার্মান এক্সপ্রেশনিস্টদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বয়স ৩০ পেরুনোর আগেই সেই ভূত মাথা থেকে সরে যায়। এর আগে একুশ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হয়। ১৯৬৬ সালে বের হয় পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থ ‘হোয়াট দ্য গ্রাস সেজ’ এবং ১৯৬৯ সালে বের হয় ‘সামহোয়ার অ্যামাং আস অ্যা স্টোন ইজ টেইকিং নোটস’মূলত এই দু’টি বই সিমিককে পাঠকসমাজে নিন্দিত ও নন্দিত করে তোলে।
আঠারো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে লিঙ্কন পার্কের এপার্টমেন্টে প্রতিবেশি হিসেবে যখন সান-টাইমসের এক সহকর্মীকে পান, তখন থেকেই সিমিকের কাব্যবোধ জেগে ওঠে। অধিবিদ্যায় নয়, জোর দিতে হবে যুক্তিতে; কল্পনাকে সন্দেহ, কবিতা সম্পর্কে সিরিয়াস গভীর ভাবনা- সবকিছুই তখন সিমিকের কবিতার বিদ্রোহী ভূমিকে ওলট-পালট করে দেয়। সিমিকের এই সহকর্মীই হয়ে ওঠেন তাঁর কবিতার প্রথম পাঠক। প্রথম দিকে হার্ট ক্রেনকে অনুকরণ করে সিমিক বহু কবিতা লেখেন। হার্ট ক্রেনের শব্দবন্ধ হুবহু উঠিয়ে এনে কবিতায় ব্যবহার করতেন। পরবর্তী জীবনে স্টিভেনস এবং কার্লোস উইলিয়াম কার্লোসের কাব্য-প্রভাবের কথাও তিনি স্বীকার করেন।
সিমিকের প্রথম দিককার কবিতাগুলোয় লক্ষ্য করা যায় অকর্মা, নৈঃসঙ্গপীড়িত লোক, বেপরোয়া দুর্বৃত্ত, পথে ঘুরে বেড়ানো মরমিসাধক কিংবা সস্তা ও নোংরা হোটেলের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনচিত্র। বলা হয় ‘কসাইখানা’ কবিতাতে সিমিকের নিজের কণ্ঠস্বর প্রথম শোনা যায়। সৃজনশীলতা ও সহিংসতার মেলবন্ধনে সেই কবিতার মূল উৎসে সিমিক ‘সময় সচেতন’ কবিতা হিসেবে উল্লেখ করে নিজের ছোটবেলাকে টেনে আনেন। তিনি বলেন, ‘আমি যে একটা কসাইখানাতে বেড়ে উঠি, ব্যাপারটা বুঝে উঠতে অনেক বছর পার হয়ে যায়…
প্রথমদিকের কবিতার আরেকটি অকাব্যিক লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, সিমিকের কবিতায় নানান পোকামাকড়ের বসবাস। তেলাপোকা ছাড়াও পিঁপড়ার প্রতি অনুরাগ দেখা যায়। তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু এতটাই ভিন্ন ছিল যে, কয়েকজন সম্পাদক তাকে পরামর্শ দেন টুথ পিক কিংবা ট্যাপকল বিষয়ে মহাকাব্য লিখতে।
এত কিছু সত্ত্বেও তাঁর কবিতায় পরাবাস্তববাদ, ঐতিহ্য, নিরীক্ষা, অধিবিদ্যা, ভাষাজ্ঞান (যদিও প্রথমে তিনি এই বিষয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন), ইতিহাস চেতনা ধরা পড়ে। কিন্তু তবুও, চার্লস সিমিকের কবিতা বিষয়গত দিক দিয়ে জীবনের সাদামাটা আনন্দ উপভোগ করতে আমন্ত্রণ জানায়। বিষয়গুলো যেন চিংড়ি ভাজা, টমেটো, রোস্ট, রেড ওয়াইন , সস্ আর আলু-পেঁয়াজের মতোই সাদামাটা এবং জীবন কেন্দ্রিক।

(সেপ্টেম্বর ২০১৭)


৭. ইভা অরণ্যা

যে কৌশল শেখায় অচেনা রোদ্দুর হতে
                           

অচেনা সেইসব রোদ্দুরে বারান্দায়, ছড়িয়ে অলকা-সংসার
তুমি গাইতে যাতনার গান। সে লহরীতে ভর করে সংহার
করতে একদল ঘোড়া কেশর ফুলিয়ে দাঁড়াতো যখন ঊষর
পেরিয়ে; প্রহরীর মত স্বচ্ছ দেয়াল উঠতো তোমার চারিধার

তোমার আতঙ্কবাদী-পরিজন খুঁড়ে চলত ব্যথিত নগরনামা  
প্রিয় সঞ্চয়। তুমি ক্লান্ত নির্জীব দীঘির মত অবারিত অশ্রু জমা 
রাখতে বিহ্বল শোকালয়ে। মাছেদের কাছে শেখা কান্না লুকানোর 
কৌশল ভুলে এগোলে হিম শহরে যখন অবশিষ্ট নেই হারাবর

(সেপ্টেম্বর ২০১৭)




৮. মোঃ কামরুজ্জামান টুটুল


জাঁহাপনা


জাঁহাপনা
রাজসভায়!
সমান্তরাল সারিবদ্ধ মন্ত্রী,সেনাপতি
সেখানে মধ্যমণি আপনি,
সবার মাথা নিচু,
রাজ্যে খুন খারাবি,চোর, ডাকাতি
ছাড়ছে না পিছু।
সবার মাথা নিচু
সবাই তোল মাথা,
আপনাদের জন্য দেশের আজ
এমন দুরবস্থা।
জাঁহাপনা!
আপনি থাকেন ঘুমে,
সময় কাটান জলসাতে,
আমরা হিমসিম খাই
সর্বদা দিনে রাতে।
খামোস!
অভিযোগ বর্তাও আমার ঘাড়ে
আজি থেকে সর্বসুখ দিলাম বিসর্জন,
কোন কাজে অবহেলা নয়
সর্বজন মিলে করব রাজ্যের উন্নয়ন।
অগ্নিশর্মা হয়ে,
উজির,উজির,উজির কোথায়?
চড়াও তাকে শূলে,
এই সভায় না এসে তিনি
বেড়ায় কোথায় ঘুরে।
জী জাঁহাপনা!
হাজির আমার তনু
রাজ্য ঘুরে দেখলাম প্রানভরি,
অনেক গরীব পরিবারেও দেখি
কান্নার ছড়াছড়ি।
যত সুখ ,যত শান্তি
উচ্চবিত্তের ঘরে,
জানালাম সুঃসংবাদ
আপনার তরে।


(মে ২০১৭)



৯. নিষাদ
সবটুকুই ফাঁকি


জীবনের সবটুকুই ফাঁকি 
তবু জীবনের আগুন ফুঁকি।  
বৃথা পথে দাড়াই পথের বাঁকে আবার বাকে পথ 
পথের শপথ পথেই তপ্ত হবো, উড়ে যাবার আগে। 
পিচঢালা রাস্তায় এখন দাড়িয়ে আছি 
ভীষণ রোদে পুড়ে যাচ্ছি আমিও রাস্তার সাথে 
একবার হাঁটবো ফুরিয়ে যাবার আগেই।

(মে ২০১৭)





 ১০. অনুভব আহমেদ

সেমেট্রি

হাতের শৃঙ্খল খুলে দিলে বাগান বাড়ির দরোজা
করুণ আঙুল কথা রাখতে শিখেছে খুব।
করিডোর থেকে  হেঁটে এলে বিকেল
পৃথিবীর হেরেমে বাস করা সিসিফাসরা দাঁড়ায় বাসের অপেক্ষায়
অফিসের সেমিট্রিতে হাড়গোড় সামলাতে সামলাতে রোগা হৃদপিন্ড  দাঁড়িয়ে থাকো তুমিও
পুরনো বন্ধুর সংগে দেখা হলে জানতে চাও "কেমন আছিস? "
প্রেমিক আঘাত পেয়েছে শুনলে ছুটে যাও
তোমার খবর রাখতে আসেনা কেউ?
তোমার জন্য অপেক্ষা করেনা বাড়ি?
কেউ বলেনা তোমার ভেতর ওত পেতে থাকা যন্ত্রণাগুলো আমাকে শোনাবে?
তোমার শুশ্রুষায় হয়না কোনও উচ্চারণ?
সময় আর সম্পর্কের অনাহারে প্রিয় হৃদপিন্ড
তুমি ক্রমশ রোগা হচ্ছ
ক্ষরণ আর দহন নিয়ে রোজ বাস থেকে
নামছো
ফিরছো  সংসারের উঠানে
যেখানে তোমার শবে তোমাকে  বুনে রেখেছেন তোমার পূর্বজ।

(সেপ্টেম্বর ২০১৭)


Comments

Popular posts from this blog